আহমদ ছফার হেটার্সদের প্রতি বিশেষ নিবেদন

Ahmed Safa
আহমদ ছফা

আহমদ ছফা বিষয়ে আমার কিছু কথা-বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে উঠতে না উঠতেই উনার প্রায় সবগুলা বই পড়ে শেষ করে ফেলেছি। চারদিকে আহমদ ছফার লেখনি শক্তির এতই প্রশংসা শুনেছি যে,কখনো ভাবতেও পারিনি একটা ‘এন্টি আহমদ ছফা’ গ্রুপ তৈরি হয়ে যাবে। আহমদ ছফার হেটার্স তৈরি হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে বলে আমি মনে করি-
১)সলিমুল্লাহ খান টকশো তে মাঝেমাঝেই বলেন, কাজী নজরুল-মীর মশাররফ হোসেনের পরেই বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে আহমদ ছফার স্থান । স্বাভাবিকভাবেই অন্য লেখকদের ভক্তরা এতে ক্ষেপে যাবে।
আমার প্রশ্ন হল আহমদ ছফা কি মৃত্যুর আগে সলিমূল্লাহ খানরে তার উত্তরাধিকারী করে গেছেন?
তাহলে সলিম ভাইয়ের অযাচিত লাফালাফির দায়ভার ছফা নেবেন ক্যান?
ব্যাপারটা এমন-হযরত মুহাম্মদ (সা) কে আমি শ্রেষ্ঠ নবী বলে মানি অথচ আমি নবী (সা) কে উপরে তুলতে গিয়ে অনেক ভুলভাল তথ্য জনগনরে দেই।
প্রশ্ন হলো দোষটা কার? আমার না নবী (সা) এর?
অর্থাৎ সলিমূল্লাহ খান ছফারে নিয়ে টকশোতে নাচানাচি করলে এইটা কি ছফার দোষ?
২) আওয়ামী লীগ যখন জিতে একাই জিতে, লীগ যখন হারে গোটা বাংলাদেশে হেরে যায়’ -ছফা
আহমদ ছফার এই উক্তিটি যারা শুনেছে , তারাই ছফাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে আখ্যায়িত করেছে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ছফার পজেটিভ নেগেটিভ দুধরণের মূল্যায়ন ই আছে।
“মুজিব শাসন একজন লেখকের অনুভব” আহমদ ছফার এই প্রবন্ধটি মনে হয় হেটার্সরা পড়ে দেখেনি।
উনি শেখ মুজিবের যেই কঠোর সমালোচনা করেছেন তা কট্টোর বিএনপির কেউ ও পারবে না।
বাংলাদেশে বর্তমান বেশিরভাগ লোক আওয়ামীবিরোধী, তাই ছফাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে ছফারে জনগনের বিপরীতে দাড় করানোর চেষ্টা।
আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত উক্তিটি ১৯৯৫ সালে করেছেন এবং তখন তারা ক্ষমতায় ছিলো না। তাই এসব বলে ছফা দুপয়সাও লাভবান হয় নি।
৩)ছফা বাঁশি বাজায়,বেসুরো গান গায়, পশু পাখি লালন পালন করে, পশু পাখিদের নিয়ে থাকে, এটেনশন সিকার etc..
এই অভিযোগটা শুনলে আমার হাসি পায়। একজন লেখকের কি বাশী বাজানোর অধিকার নেই? হ্যা ছফার এসব বাশি বাজানো কিংবা গাঁজা খাওয়াকে যারা বুদ্ধিজীবিত্বের প্যারামিটার বলে আপনারা বরং তাদের সমালোচনা করুন।কিন্তু এতে ছফাকে জড়াবেন না প্লিজ।
৪) ছফা যদি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন তাহলে তিনি কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? এরকম একটা ট্রল ইদানিং দেখা যাচ্ছে।
আহমদ ছফা নিজেকে কখনোই রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন ; এরকম মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন নি। একজন লেখক হিসেবে উনি উনার জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে লেখক নুরুল আনোয়ার এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা লিখেছেন; ওনাকে ধন্যবাদ।
৫) আহমদ ছফার ভক্তদের অতি লাফালাফি। আপনি আহমদ ছফার একটি বই পড়লেন এবং উনাকে বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখক বলেছেন বলে ঘোষণা দিলেন! একবার চিন্তা করে দেখুন তো,বাংলা সাহিত্য কথাটি কতটা বিস্তৃত! নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-মানিক-শরৎচন্দ্রের মত লেখকরা এই ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন।
যেমন ধরুন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-লিওনেল মেসি;খেলোয়াড় হিসেবে যা অর্জন করেছেন কোনোভাবেই তাদের এন্টি সমর্থক গোষ্ঠী হবার কথা ছিল না। কিন্তু ঐ যে! মেসির সমর্থক রোনালদোকে ছোট করে, আবার রোনালদো সর্মথকরা মেসিকে ছোট করে। এভাবেই বিশ্বের সেরা প্লেয়ার এরও কোটি কোটি হেটার্স তৈরি হয়ে যায়।
ছফা আমার দৃষ্টিতে মোটামুটি ভালো মানের লেখক এবং একজন ভালো মানুষ ছিলেন। উনার চিন্তাধারা বৈপ্লবিক ছিলো এবং তিনি ভুলের উর্দ্ধে ছিলেন না।ছফা নিজেরে কখনো দার্শনিক বলে দাবি করেন নাই। আপনারা ছফারে জোর করে দার্শনিক বানাইয়া সমালোচনা করলে তো হবে না।
আপনারা উনার সাহিত্য পড়ুন, সেটা নিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু অন্য জনের দোষ আহমদ ছফার উপর চাপিয়ে দিবেন না।
আজ এই প্রিয় লেখক এর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন আহমদ ছফা।

লেখক: মোরশেদ আলম