কিভাবে আমরা মায়েরা নিজেদের ভালো রাখবো।

কিভাবে আমরা মায়েরা নিজেদের ভালো রাখবো
কিভাবে আমরা মায়েরা নিজেদের ভালো রাখবো

মাতৃত্ব একটি বড় দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব নিয়ে চলতে চলতে আমরা মায়েরা অনেক সময় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং অনেক সময় জীবনের প্রতি একঘেঁয়েমি বা হতাসা চলে আসে। এবং অনেক সময় তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে, আমরা নিজেদের নিজেরা সময় দিতে ভুলে গেছি। সেই কারণেই হয়তো এই একঘেয়েমি বা ক্লান্তি। তাই আসুন আজ আমরা কিছু পেরেন্টিং টিপস শেয়ার করি। কিভাবে আমরা মায়েরা নিজেদের ভালো রাখবো।
প্রত্যেকদিন ঘুম থেকে উঠে অন্ততপক্ষে 15 মিনিট নিজের সাথে সময় কাটান। নিজের যা কিছু ইচ্ছে হয়, সেসময় করতে পারেন। কখনো গান শুনতে হতে পারে, কখনো শরীরচর্চা করতে পারেন, কখনো বা এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে শান্ত মনে বসে খেতে পারেন। দেখবেন সারাদিনের ঝড়-ঝাপটা সামলানোর জন্য আপনি কিন্তু অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে গেছেন।
আপনার যদি কোন পুরনো হবি থাকে সেই ধুলো পড়ে যাওয়া হবিগুলোকে আবার টেনে বার করুন। এবং অনেক সময় সেই হবিগুলো থেকে আপনি অনেক রকম কাজও করতে পারেন। এতে কিন্তু আপনি মনে অনেক বেশি আনন্দ পাবেন।
সারা দিনে আমাদের মায়েদের অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। এবং সমস্ত কাজের জন্য একটু লিস্ট বা টাইম টেবিল মেইন্টেন করুন। দেখুন নির্জনঝাটে আপনি সহজে করে ফেলেছেন। তবে হ্যাঁ কাজের মধ্যে স্মার্টফোনে খুট খুটটা বন্ধ করুন। স্মার্টফোন বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং কাজের জগতের মধ্যে না প্রবেশ করানোই ভালো। বরং তার জন্য একটি আলাদা নির্দিষ্ট সময় এবং শুধুমাত্র ওই সময়টিতে আপনি নিজেকে স্থির করুন যে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করবেন।
আপনার বাচ্ছা যদি খুব ছোট থাকে তাহলে সকল কাজের দায়িত্ব আপনি একা হাতে নিতে যাবেন না। এটা খুব ক্লান্তিকর এবং একঘেঁয়ামি। বরং বাড়ির সব সদস্যদের সাহায্য নিন, আপনি যদি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে থাকেন তাহলে ডুমেস্টিক হেল্পের সাহায্য নিতে পারেন।
বাচ্চা যখন আস্তে আস্তে বড় হতে যাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে তখন ডেফিনিটলি টুকটাক কাজকর্ম ওর উপর ছেড়ে দিন। যেমন ও স্কুলে এপসেন্ট করলে ওই যেন বন্ধু-বান্ধবদের থেকে হোম ওয়ার্ জানে। সেই জানার
দায়িত্ব যেন আপনার ওপর না বর্তায়। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার উপর কাজের দায়িত্ব লাগুব হচ্ছে এবং ও অনেক বেশি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়ে উঠেছে।
যেসব বাচ্চারা বসয়সন্ধির দিকে যাচ্ছে তাদের মাদের আমি একটা কথাই বলবো অবশ্যই Over protecting parenting shall থেকে বেরিয়ে আসুন। এই সময় বাচ্চারা এটা পছন্দ করেনা। বরং তাদের সাথে Positive Respectful Relationship Maintain করুন। দেখবেন ও আর আপনার মধ্যে অনেক বেশি সুস্থ সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
যেসব মায়েরা একা হাতে বাবা-মা দুজনের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের প্রথমত আমি কুর্নিশ জানাই এবং একটা কথা তাদের জন্য বলবো কেউ আপনাকে বাহবা দেবে না, নিজেকেই নিজে ট্রীট দিন। নিজের পিট নিজে চাপলে এগিয়ে চলুন আপনার দায়িত্ব পালনের পথে। তবে হ্যাঁ অবশ্যই নিজের জন্য প্রত্যেকদিন আলাদা করে সময় রাখবেন।
বাচ্চার পড়াশুনার প্রতি অবশ্যই যত্ন দেবেন এবং দেখবেন যে প্রত্যেকটি সাবজেক্টে যেন ও যত্নশীল ভাবে পড়াশোনা করে। কিন্তু যদি আপনি পড়াতে বসে অত্যন্ত হাইপার হয়ে যান এবং আপনার passions lose করে মারধর বকাবকি করেন। তাহলে কিন্তু সেই দায়িত্বটা আপনি অন্য কারোর উপর ছেড়ে দিন। কারণ সেক্ষেত্রে বাচ্চাও আপনার কাছে পড়তে আকৃষ্ট হবেন আপনিও খুব হতাশায় ভুগবেন। বরং একটা মনিটরিং আপনি সবসময় রাখতে পারেন।
যেসব মায়েরা চাকুরীজিবী তাদের পক্ষে তো নিজেদের প্রত্যেকদিন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে পড়ানো সম্ভব হয়না। তাদের বাড়ির লোকজনের সাহায্য নিতে হবে। অথবা প্রফেশনাল হেলপ এ সাহায্য তো নিতেই হবে।
সর্বোপরি আমি একটা কথাই বলবো আপনার বাচ্চা কিন্তু একদম স্বতন্ত্র একটি ব্যক্তিত্ব। তাই তাঁর সাফল্য ব্যর্থতা তার সম্পূর্ণ দায়ভার কিন্তু আপনার উপর বর্তায় না। মা হিসেবে অবশ্যই আপনার কাজ তার পাশে থাকা, তাকে সাপোর্ট দেওয়া, তাকে Unconditional Love সেটা দেওয়া এবং তার সুখ-দুঃখের শরিক হওয়া। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন আপনার পরিণত মন এবং অবশ্যই প্রয়োজন আপনার মানসিক স্থিতিশীলতা। এবং সেটা আসবে তখনই যখন আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন আনন্দে থাকবেন।
তাই নিজেকে ভালো রাখবেন, নিজেকে যত্নে রাখবেন। ভালো থাকবেন।
Payel Ghose
Parenting Consultant