মোটিভেশনাল বক্তব্য বনাম জীবন সংগ্রামীদের কঠিন বাস্তবতা!!

Motivational vs reality
মোটিভেশনাল বক্তব্য বনাম বাস্তবতা

করোনা ভাইরাস লকডাউন এর শুরুতে আমি গ্রামে যাই। গ্রামের যাওয়ার ৪-৫ দিন পরে হঠাৎ বাড়ির এক ছোট ভাই আমাকে বলে “ভাইয়া পাশের বাড়ির এক ছেলে খুবই ভালো একটা ল্যাপটপ বিক্রী করবে”। আমি তাকে বললাম “তুই এটা কিনে নে, আমি যেই কয়দিন বাড়ি আছি তোকে কাজ শিখিয়ে দেবো”। আমার কথা মতো সে তার বাসায় গিয়ে মাকে জানানোর দুই দিনের মধ্যে উক্ত ল্যাপটপ টি ক্রয় করে।
আমার মনে আশা তাকে বাড়িতে যেই কয়দিন আছি Microsoft Office, Excel, PowerPoint এগুলা শিখিয়ে দেবো তার কাছ থেকে কোনো টাকা নিবো না। যেই ভাবনা সেই কাজ আমি তাকে শিখাচ্ছি। হঠাৎ তার মা আমার কাছে এসে আমাকে বললো “বাবা আমিতো তোকে কিছু বলিনাই আর তুইও আমাকে কিছু বলিস নাই এখন তোক কত টাকা দিতে হবে?” আমি বললাম “আমার কোনো টাকা লাগবে না তাছাড়া আমি কয়দিন পরে ঢাকা চলে যাবো” তিনি বললেন এটা কি হয়? আচ্ছা তুই শিখা আমি দেখতেছি বিষয়টা। লকডাউনও আরো বাড়লো আমারও বাড়িতে আরো দীর্ঘ্য সময় থাকতে হলো। আমি তাকে Microsoft Office, Excel, PowerPoint শেখানোর পর এবার গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখাচ্ছি। তখন বাড়িতে Wifi এর ব্যবস্থা ছিল না। আমি আমার মডেম দিয়ে তাকে হেল্প করতেছি।
এইভাবে তার গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা শেষ এখন সে ফ্রিল্যান্সিং শিখবে। আমিও তার আগ্রহ দেখে রাজি হলাম। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলো শুরু থেকে Wifi এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এমতাবস্থায় সে বাড়িতে Wifi এর লাইন নিতে রাজি হলো। কিন্তু যেখান থেকে লাইন নিবে ৮,০০০ টাকা লাগবে!! কারণ অনেক দূর থেকে লাইন নিতে হবে।
এখন তার বাসায় টাকা নাই। সে বাসা থেকে ল্যাপটপ কেনার সাপোর্ট পেয়েছে, কাজ শেখার সাপোর্ট পেয়েছে।
এবার বলবো মামা-খালুর সাপোর্ট কিভাবে হয় সেই গল্প।
তার বাসায় টাকা ছিল না Wifi/Internet লাইন নেওয়ার জন্য তাতে কি? স্থানীয় Internet এর কোম্পানী তো তার মামাদেরই!!! সে তার মামাকে একটা কাজ দেখালো মামার পছন্দ হলো এবং মামাকে বললো তার Wifi এর সমস্যার কথা। মামা যাকে ডিলার দিয়েছে তাকে কল দিয়ে বললো আগমী কালের মধ্যে আমার বোনের বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ চাই। যেই কথা সেই কাজ দিনে দিনে তার বাসায় ইন্টারনেট এর সংযোগ!!!
সে এখন একজন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং ফ্রিল্যান্সার। তার মত এমন অনেক গল্প আছে লিখে শেষ করতে পারবো না। আমি তার উত্তোরত্তর সফল্য কামনা করি এবং সেই সাথে অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা তার জন্য।
এবার আসি বাস্তবতা।
বাস্তবতার কথা কি বলবো চোখে পানি চলে আসে। তার সাথে অনেকেই খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছে শেখার জন্য এমনকি আরো অনেক আগের থেকেও অনেকজন শেখার জন্য খুবই আগ্রহী কিন্তু আফসোস ওরা একটা ল্যাপটপ কিনতেও পারে না শিখতেও পারে না।
এমন জীবন সংগ্রামী মানুষদের আপনি মোটিভেশনাল বক্তব্য শোনিয়ে কি লাভ হবে বলুন? বরং এতে তারা কষ্ট পাবে। তাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং ভালোবাসা। আল্লাহ তাদের খারাপ সময় দূর করে দিন, আমিন।
গল্পটা থেকে এটাই শিক্ষা পেলাম এই যুগে যার পেছনে সাপোর্ট আছে সাফল্য কেবল তার জন্য।
লেখক: বাহারুল আলম