বিজনেসের জন্য কেমন লোগো প্রয়োজন?

Graphics Design
গ্রাফিক্স ডিজাইন-Graphics Design

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা যতগুলো প্রোডাক্ট ব্যাবহার করি তার প্রতিটা আমরা নাম ধরে মনে রাখি এবং প্রতীক বা লোগো দিয়ে চিনতে পারি। তাই কোম্পানী/প্রতিষ্ঠান/ কিংবা ব্যবসাকে শক্তিশালী এবং ব্র্যান্ডিং আইডেন্টিটি দিতে হলে অবশ্যই একটি প্রফেশনাল লোগো থাকা বাধ্যতামূলক। সবার জীবনের একটা অংশ হিসেবে যদি আপনি আপনার লোগোকে দেখতে চান তার জন্য অবশ্যই আপনার অনেক বিশ্লেষণ করে এর রূপ দেয়া উচিত। যাইহোক চলুন লোগোর প্রকারভেদ এবং আপনার ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন লোগো মানানসই জেনে নেই। আশা করি পড়া শেষে আপনি নিজেই বুঝবেন কোন লোগো আপনার প্রয়োজন । আমাদের আশেপাশের সমস্ত লোগোকে গঠনগত দিক দিয়ে সাতটি টি ভাগ করা হয়েছে।

১.ওয়ার্ড মার্ক লোগো ডিজাইন:-

এধরণের লোগো গুলো সাধারণত একটি ব্যবসায়ের নামের উপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হয়। অর্থাৎ টেক্সটের মধ্যেই বা লোগোর মধ্যে কোম্পানির নাম বা ব্রান্ড নাম থাকে। এ ধরনের লোগো গুলোতে যেহেতু শুধুমাত্র টেক্সট ব্যবহার করা হয়, তাই টেক্সটের স্টাইল বা ফন্ট কেমন হবে, রং কেমন হবে এটা মুখ্য থাকে। যেমন: Google, Coca Cola ইত্যাদি। ওয়ার্ড মার্ক লোগো কোথায় উপযুক্ত, কোথায় উপযুক্ত না ? যদি আপনার বিজনেস নতুন হয় , নাম যদি ছোটো-খাটো হয়, যদি আপনার কোম্পানি নতুন হয় এবং নাম যদি আপনার ব্রান্ড হয়ে থাকে তবে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের মনে রাখতে সুবিধা হয়।

২.লেটার মার্ক লোগো ডিজাইন:-

একটি লেটারমার্ক লোগোতে সাধারণত এক থেকে চারটা অক্ষর থাকে, যেগুলো কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষর। কোন ছবি বা শেপ এ লোগোতে ব্যাবহার করা হয় না। যেমনটা বিবিসি, সিএনএন  ইত্যাদি লোগোর ক্ষেত্রে দেখে থাকি। সিএনএন কিংবা বিবিসি তাদের বিশাল আকারের কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নাম পরিহার করে শুধুমাত্র প্রথম ওয়ার্ড ব্যবহার করে তৈরি করেছে। এই ধরণের লোগোকে লেটার মার্ক লোগো বলা হয়। লেটার মার্ক লোগো কোথায় উপযুক্ত, কোথায় উপযুক্ত না ? কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ভিজুয়াল আইডেন্টিটি একসাথে ব্যবহার করতে চাইলে এবং কোম্পানির নাম বেশী লম্বা হলে এ ধরণের লোগো ব্যবহার করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। একটা পরিচিত উদাহরন দেই যেমন – WE, DSB এর ক্ষেত্রে কিন্তু এইধরনের লোগো হতে পারে। কিন্তু আপনার কোম্পানি যদি নতুন হয় তবে এ ধরণের লোগো ব্যবহার না করাই ভাল।

৩.পিক্টোরিয়াল বা সিম্বল লোগো ডিজাইন:-

আইকন ভিত্তিক লোগো গুলোকে সাধারণত ব্রান্ড/সিম্বল/ পিক্টোরিয়াল লোগো বলা হয়। আপনার কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনির্দিষ্ট আইকন নির্বাচন করবেন যার দ্বারা সহজেই মানুষ আপনার কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে পারবে। এ ধরনের লোগোতে কোন রকম লেখা বা কোম্পানির নাম থাকে না । যেমন- অ্যাপেল সিম্বল লোগো কোথায় উপযুক্ত, কোথায় উপযুক্ত না ? আপনার ব্রান্ডকে আলাদা পরিচয় দিতে চাইলে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু নতুন কোম্পানির বা ছোট পরিসরে শুরু করার ক্ষেত্রে এটা খুব একটা ব্যাবহার হয় না বা না করাই ভালো। কারন এতে কোম্পানির নাম উল্লেখ থাকে না ।

৪.কম্বিনেশন মার্ক লোগো ডিজাইন:-

কম্বিনেশন মার্ক লোগো হল কোন ছবি বা পণ্যের সমন্বয়। কম্বিনেশন মার্ক লোগো হল এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় লোগো। নতুন কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্বিনেশন  মার্ক লোগো খুব জনপ্রিয়। কারণ কম্বিনেশন মার্ক লোগোতে ওয়ার্ড ব্যবহার করে কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নাম এবং শেপ ব্যবহার করে কোম্পানির একটা প্রতীক দাড় করনো যায়। যেমন- বার্গার কিং কম্বিনেশন মার্ক লোগো কোথায় উপযুক্ত এবং কোথায় উপযুক্ত না? নতুন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য কম্বিনেশন মার্ক লোগো গুলো খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু সহজ সরল ডিজাইনের উদ্দেশ্য থাকলে এই ধরণের লোগো পরিহার করা উচিত।

৫.অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো ডিজাইন:-

অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো সাধারণত কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের আইডিয়া, গুনাগুণ সম্পর্কে গ্রহকদের উপস্থাপন করে। অ্যাবস্ট্রাক্ট মার্ক প্রায় পিক্টোরিয়াল লোগোর মতই। এই ধরণের লোগো কালার এবং অনন্য স্টাইলের মিশ্রণে ডিজাইন করা হয়। অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগোতে শেইফের উপরে-নিচে, ডানে-বামে  কোন লেখা বা কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া যায়। যেমন- Adidas , Pepsi অ্যাবস্ট্রাক্ট মার্ক লোগো কোথায় উপযুক্ত এবং কোথায় উপযুক্ত না? আপনি আপনার লোগোতে কোনো ধরনের চিত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক তবে খুব গুরুগম্ভীর ম্যাসেজ দিতে চান। তাহলে এ লোগো ব্যাবহার করতে পারেন । তবে বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই সময়ে ইউনিক এমন লোগো ডিজাইন করা কঠিন ।

৬. ম্যাসকট লোগো ডিজাইন:-

ম্যাসকট লোগো বিভিন্ন কালার ব্যবহার করে কিছুটা কার্টুনিশ ও কোন ফানি শেপ অথবা ছবি যোগ করে ডিজাইন করা করা হয়।ম্যাসকট লোগো অনেক সময় খেলাধুলার পণ্যতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।যেমন:- কেএফসির লোগো হলো মাস্ককোটস লোগোর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ম্যাসকট লোগো কোথায় উপযুক্ত এবং কোথায় উপযুক্ত না ?

যদি আপনার কোম্পানি  বাচ্চা বা ফ্যামিলিকে আকর্ষণের উদ্দেশ্য থাকে। কোম্পানি নিস যদি আনন্দদায়ক, মজার হয়ে থাকে, তবে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করা উচিত।ম্যাসকট লোগো খেলাধুলার পণ্যতেও ব্যবহার করা হয়। গম্ভীর কোন বিষয়কে ইঙ্গিত করলে  এই ধরণের লোগো পরিহার করা উচিত।

৭.অ্যাম্বলেম লোগো ডিজাইন:-

অ্যাম্বলেম লোগো হচ্ছে লোগো ডিজাইনের সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণ। প্রথম প্রথম যখন লোগো ডিজাইনের ব্যপারটা যখন মানুষের মনে আসে তখন এই অ্যাম্বলেম জাতীয় লোগো দিয়েই ডিজাইন শুরু হয়। এই লোগো টেক্সট এবং আইকন বা সিম্বল যুক্ত করে একসাথে ডিজাইন করা হয়। যেমন- Starbucks Coffee  অ্যাম্বলেম লোগো কোথায় উপযুক্ত এবং কোথায় উপযুক্ত না? এই ধরনের লোগো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী সংস্থা সূমহে ব্যবহার করা হয়।এবং আপনার কোম্পানী/প্রতিষ্ঠান যদি কোন ঐতিহ্যবাহী বা প্রথা ভিত্তিক হয়ে থাকে। এটা ফুড বা কফিশপের নামের ক্ষেত্রেও হতে পারে। অ্যাম্বলেম সাধারণত ক্রেস্টে এবং সিল ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।

অ্যাম্বলেম লোগো গুলোতে একটি বিশেষ অসুবিধা হলো যখন এই লোগো ছোট করা হয়, তখন লোগোটা বুঝা যায়না। তাই আপনার মাথায় রাখতে হবে এই ধরণের লোগো দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাবে না যেমন বিলবোর্ড এবং ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে লোগোর সাইজ ছোট করার প্রয়োজন হবে সেই সময় আপনার কোম্পানির নাম অস্পষ্ট থাকবে। এছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে এখানে ক্লিক করুন।

ধন্যবাদ

বাহারুল আলম