বহুগামী বিরল মানসিক রোগী স্ত্রীর পাশে থেকে স্বামীর নজির স্থাপন!!

Polygamous rare mental patientহঠাৎ স্ত্রী বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, নিজের অজান্তেই অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বিরল মানসিক সমস্যার ঘোরে! যা শুনে স্বামীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। স্ত্রী নিজেই স্বামীর থেকে ‘তালাক’ চেয়েছিলেন ভুল বুঝে! কিন্তু তার স্ত্রী-অন্তপ্রাণ যুবক শুধু “ভালোবাসি, ভালোবাসি” বলেছিলেন। এমতাবস্থায় তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি ছুটেছিলেন সর্বত্র। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাসের চিকিৎসার পরে আপাতত সুস্থ সেই তরুণী এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-তে এসে। অবশেষে স্বামীর মুখে হাসি ফুটেছে, এমনটা ভারতের উত্তরপ্রদেশে ঘটেছিল।
এসএসকেএমের ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র কর্মকর্তা প্রদীপ সাহা জানান ঐ স্ত্রী নিম্ফোম্যানিয়াক ডিজ়িজ উইথ সাইকোটিক ডাইমেনশনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঐ রোগে অস্বাভাবিক যৌন চাহিদা তৈরি হয় শরীরে। দ্বৈত সত্তা কাজ করত স্ত্রীর ক্ষেত্রে। অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না মনস্তত্ত্বের এই পর্যায়কে। ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র কর্মকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন মাত্র দুটি ঘটনা পেয়েছি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এ ধরনের। স্বামী জানান তাঁদের পরিচয় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে হয়েছিল, এরপরেই তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরো বলেন বিয়ের প্রথম সাত মাস স্ত্রীর সবই ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন সে খুব হিংস্র হয়ে উঠেন! যা দেখে মনে হবে যে, কেউ যেন তাকে ভর করেছে। কারণ অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন তাঁর দাবি, তাঁর স্ত্রী আট বছর বয়সে এক বালককে লরির চাকায় পিষ্ট হতে দেখেছিলেন নিজের চোখের সামনে। তারপর থেকেই তার যাবতীয় অদ্ভুত আচরণের সূত্রপাত ঘটে। তিনি আরো বলেন তার স্ত্রী প্রায় ছায়া নামে এক বান্ধবীর গল্প বাড়ির লোকদের বলতেন। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি আসলে ছায়া নামে কেউ ছিল না তার জীবনে, যার সবটাই কল্পনা। স্ত্রী কয়েক মাস পরপর হঠাৎ করেই উগ্র হয়ে যেতেন। সেই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করত।
তাঁকে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান যুবক তার স্ত্রীর অতীত জানার পরে। তবে কোন লাভ হয়নি তাতে। স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে অসুস্থতা প্রভাব ফেলেছিল।
যুবকটি আরো জানান তিনি দুবাইয়ে থাকতেন আর তার স্ত্রী থাকতেন দেশে। পরে স্ত্রীকেও দুবাই নিয়ে যান যুবক। কারন দুজনের মধ্যে ব্যবধান কমলে যদি সমস্যার সমাধান হয় সেই আশায়। কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা মেটেনি। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন একাধিক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর অনুপস্থিতিতে।
তিনি আরো বলেন তার স্ত্রী বলেছিল কেউ যেন তাঁকে ডাকত। মাঝে মাঝে চিৎকার করত ঘরের মধ্যে অন্য কেউ রয়েছে বলে। আবার ঘোর কেটে গেলে নিজেই কেঁদে কেঁদে বলতেন সে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, তাকে যেন আমি ছেড়ে দিই। ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র কর্মকর্তা প্রদীপ সাহা জানান, কী করছেন অসুস্থ মানুষটি ঘোরের মধ্যে, এমন কি কার সঙ্গে কোথায় যাচ্ছেন, তা বোঝার মতো কোন অবস্থায় থাকেন না। সেই ভাবনাও আসত না তিনি যে বিপদে পড়তে পারেন। এই রোগকেই বলে অডিটরি হ্যালুসিনেশন। ঘোরের মধ্যে মেয়েটি মনে করত কেউ যেন তাকে ডাকছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠত অবচেতন মনে অবাঞ্ছিত দৃশ্য।
যুবকটি আরো জানান, দেশের বড় বড় হাসপাতালে ছুটেও কোনো উপকার পাননি তার স্ত্রীকে সুস্থ করার জন্য। গত মে মাস চিকিৎসার পরে তরুণী এখন পুরোপুরি সুস্থ এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’ তে।
যুবকটি বলেন, অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জেনে আমি তার সাথে প্রথমে ১৩ দিন কথা বলিনি। পরে যখন বুঝতে পারলাম ও অসুস্থ তখন মনের সব অভিমান দূরে রেখে ভালবেসেই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছি।
যুবকের এ ধরনের আচরণের প্রশংসা করে প্রদীপ সাহা বলেন, রোগী যা করছেন, সেটা শুধুই অসুখের বশে তা বুঝতে হবে পরিবার পরিজনদের। এক্ষেত্রে ওই স্বামী যেভাবে তার স্ত্রীর পাশে থেকেছেন তা সত্যিই দৃষ্টান্তের।
তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার