আপনার সন্তান কথা শোনে না? তাহলে জেনে নিন বাধ্য করার ১০ উপায়

child to listen-blog.durjoybd.comএমন বাবা-মা খুঁজে পাওয়াই কঠিন ‘সন্তান অবাধ্য’এই অভিযোগ নেই। আত্মীয় বা বন্ধু মহলে অনেক আলোচনাও হয়, অবাধ্য ছেলে/মেয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ে। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি? কেন আপনার সন্তান কথা শোনে না? কেবলই কি সন্তানের দোষ, না কি আপনার ক্ষেত্রেও সেখানে কোনো ফাঁক থেকে যাচ্ছে?
বাচ্চাদের উপযুক্ত করে লালন পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাবা-মায়েরা ধারণা করেন যে, বাচ্চারাও আমাদের মতো! আমরা যা পছন্দ করি সন্তানরাও তাই পছন্দ করবে বা আমরা যা বুঝি সন্তানরাও তা বোঝে। আমরা এটা বুঝি না যে, বাচ্চা সন্তান যদি আমাদের মতো করে বুঝত তাহলে তো সে বাচ্চা থাকতো না। এজন্যে সন্তান যেভাবে বুঝবে, সন্তানকে সেভাবেই বুঝাতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রতিটি পারিবারিক সম্পর্ককে শ্রদ্ধাপূর্ণ এবং মমতাপূর্ণ করা সেই সাথে সন্তানকে সবসময় আদেশ/নির্দেশ না দিয়ে উদ্বুদ্ধ করলে, কষ্টসহিষ্ণু এবং পরিশ্রমী করে তুললে, সন্তান আপনার কথা অবশ্যই শুনবে।
সন্তানকে যা করবেন কথা শুনাতে:
১. তিরস্কার করা বা সারাক্ষণ আদেশ/নির্দেশ করতে থাকলে আপনার সন্তান ভাবতে পারে যে, বোধ হয় আপনি তার প্রতিপক্ষ। তাই বাচ্চাদের তিরস্কার থেকে বিরত থাকুন। কারণ সন্তানের বিকাশের জন্যেই এই অনুভূতিটি জরুরি যে, আপনি সন্তানের বন্ধু। আর বড়দের মতো করে ছোটদেরও এই ব্যাখ্যাটা জরুরি যে, সে কেন কাজটি করবে।
২. আপনার সন্তানকে এটা বুঝতে দিন যে, আপনি তাকে বোঝেন: আপনার সন্তান যত বুঝবে যে আপনি তাকে বোঝেন তত বেশি সে আপনার অনুগত হবে, আপনার কথা শুনবে। অতএব, সন্তানকে শোনানোর জন্যে আগে তাকে শুনুন এবং তার কথায় মনোযোগ দিন। তাকে এটা বুঝতে দিন যে, আপনি তাকে বোঝেন।
৩. একমত হোন সন্তানের ব্যাপারে: সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মায়ের ঐকমত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই ব্যাপারে কখনো বাবা-মা ভিন্ন মত দেবেন না। কারণ এতে সন্তান অনেক বিভ্রান্ত হয়। আগেই নিজেরা সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নিন। আর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে সেটা নিয়ে কখনো সন্তানের সামনে কোনো রকম বিতর্কে জড়াবেন না। আপনার নিজেরা কথা বলুন।
৪. সন্তানের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিন: আপনি যদি সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন, তাহলে জবাবের জন্যে সে হয়তো এমন কাউকে খুঁজে নেবে, যার পরিণতি আপনার জন্যে সুখকর নাও হতে পারে।
৫. মিটিয়ে ফেলুন জেনারেশন গ্যাপকে: বাচ্চাদের সাথে জেনারেশন গ্যাপের অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে অধিকাংশ বাবা-মায়েরা চান যে, তারা তাদের ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, ঠিক তাদের সন্তানও তেমন হবে। ফলে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্যে। কাজেই আপনাকে সহনশীল হতে হবে কিছু কিছু ব্যাপারে। সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ এবং চাহিদার সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ এবং চাহিদার একটা ভারসাম্য আনতে হবে।
৬. সন্তানের মধ্যে দেখতে যাবেন না আপনার অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন: অধিকাংশ বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের সন্তানের মধ্যে তার অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান। যার ফলে সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কী হবে সেটা তারাই ঠিক করে দেন, সেইক্ষেত্রে সন্তানের চাওয়া বা সামর্থ্যের বিষয়টিকে কোনোভাবে গুরুত্ব না দিয়ে। আর পরবর্তীতে সন্তানকেই তার মাশুল দিতে হয়। সে না পারে তার বাবা-মায়ের চাওয়া পূরণ করতে, আর না পারে সে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। কাজেই সন্তান বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে সন্তান তার নিজের সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে তার চিন্তা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা দিন।
৭. বাচ্চাদের আত্মমর্যাদাবোধকে নষ্ট করবেন না: বাচ্চাদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে যা আমরা অনেক সময় ভুলেই যাই। অন্যের সামনে আমরা হয়তো তাকে বকাবকি করি/ভুল ধরিয়ে দেই অথবা অপ্রস্তুত করি। সতর্ক থাকুন এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে।
৮. যা আপনি নিজেও পালন করেন সন্তানকে তা-ই বলুন: বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়েরা কি বলছে সেটা নয়, বরং কি করছে সেটাই বেশি অনুকরণ করে। কাজেই যা আপনি নিজেই করেন না তা আপনার সন্তানকে করতে বলবেন না।
৯. সন্তান ভুল করলে তাকে মাশুল পেতে দিন, প্রয়োজনে শাস্তিও দিন: আপনার সন্তান যদি বোঝে যে, আপনার কথা না শুনেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে সে অবাধ্য হতে আরো উৎসাহ পাবে। তাই সন্তানের সাথে সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি না করে একটু শান্ত থাকুন এবং কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে কখনোই দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। যার কারণ সন্তান যদি বুঝতে পারে যে, এই ব্যাপারে অবাধ্য হবার কারনে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাহলে সে পরবর্তীতে সাবধান হবে।
১০. সন্তানের সাথে একই কথা বার বার বলবেন না: সন্তানের সাথে কিংবা কারো সাথে একই কথা বার বার বললে এতে তার গুরুত্ব কমে যায়। এর চেয়ে ভালো ১ বার বলুন। তাকে এটা বুঝতে দিন কথা না শোনার শাস্তি।

দূর্যয়বিডিডটকম