প্রাচীনকাল থেকেই নানা রকম বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাবিজের ব্যবহার লক্ষণীয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাবিজের ব্যবহার নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। রোগমুক্তির জন্য তাবিজের ব্যবহার কতটুকু যৌক্তিক এবং ইসলাম এটাকে কতটুকু সমর্থন করে? সেটা কি আমরা জানি।
সেই ব্যাপারে আজকে বিস্তারিত কথা হবে-
আল্লাহর কালাম লেখা আছে ভেবে অনেকে যে তাবিজগুলো ব্যবহার করে সেগুলোতে আসলে এবস শয়তানী বিদ্যার সূত্র লেখা হয়। আর বলা হয় যে এগুলো বিভিন্ন সূরার প্রতীক! আপনি যদি কখনো কোনো তাবিজ আসলে কুলে দেখেন তাহলে দেখবেন যে সেখানে মোটেও আরবীতে কুরআন লেখা নেই বরং দুর্বোধ্য কিছু নকশা আছে। আদতে সেগুলোর মাধ্যমে কোনো শয়তানের আশ্রয় চাওয়া হয় বা শয়তানের ইবাদত করা হয়!
এখানে বিভিন্ন শয়তানের নাম লেখা আছে! এই সব নকশার মাধ্যমে শয়তানের স্তুতি করে তাদের সাহায্য চাওয়া হচ্ছে! অতএব এটা শিরক। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যে অনেক কুরআন শরীফের গুরুতে প্রতিটা সূরার ফযীলাত ও নকশা দেয়া থাকে।আমাদের বাসায় একদম ছোটবেলায় যে কুরআন শরীফটা আমরা রেগুলার পড়তাম সেটা ছিল এইরকম নকশা ভর্তি। মজার ব্যাপর হচ্ছে এই বিষয়গুলো অন্য সকল শিরকী ধর্মেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাধু সন্ন্যাসী বা মুনী ঋষিরা এইসব তন্ত্র মন্ত্র করতেন।
সুফীবাদের হাত ধরে আমাদের ধর্মেও এগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এগুলোর ইসলামিক ভার্সন হচ্ছে পীর ফকির যাদের আমরা আল্লাহর আউলিয়া ভেবে বিভ্রান্ত হই। আর আছেন এক শ্রেণীর হুজুর যাদের দ্বীনের জ্ঞান খুবই সামান্য, তাই অধিকাংশ সময়েই এরা এগুলো দেন না বুঝেই দেন। আর অনেকে জানলেও মানতে চান না কারণ তাবিজ বিক্রি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। সমস্যা হচ্ছে এগুলোর গ্রাহক কিন্তু শুধু অশিক্ষিতরা না। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে আমি মানুষকে ধুমায়ে তাবিজ ব্যবহার করতে দেখিছি। এর কারনের মাঝে রয়েছে খুব তুচ্ছ কারণ যেমন বাচ্চারা রাতে বিছানায় বাথরুম করে দেয় কিংবা ভয় পায়………. আবার বড় বড় বিপদ থেকে উদ্ধারের আশাও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হচ্ছে বিপদ আপদের সময় এগুলো না করে থাকা। অনেকে আছেন যে মুখে বলেন যে এসব তাবিজ কবজে তার বিশ্বাস নেই কিন্তু কোনো বিপদে পড়লে ঠিকই এগুলোর আশ্রয় নেন। ঈমানের পরীক্ষাটা এখানেই। অনেকে আছেন যারা দাবী করেন যে শিরকী কিছু লেখা না থাকলে কুরআনের আয়ত দিয়ে তাবিজ দেয়া যাবে স্রেফ একটা চিকিতসা ব্যবস্থা হিসেবে। এখানে আমাদের কয়েকটা জিনিস বুঝতে হবে-
১। তাবিজ কখনওই স্পষ্ট কুরআনের আয়াত/ আল্লাহর নাম দিয়ে দেয়া হয় না। এটা যারা এসব সমর্থন করেন, তারাও স্বীকার করবেন। কারণ আমরা সবাই জানি যে কুরআনের আয়াত পবিত্র, এটা লেখা তাবিজ টয়লেট বা সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই তারা যেটা করেন সেটা হচ্ছে সংখ্যা তত্ত্ব ব্যবহার করেন, যেটার কথা আগে উল্লেখ করেছি। তাদের দাবী হচ্ছে এটা স্রেফ একটা সাংকেতিক কোডের মত। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বিভিন্ন আরবী হরফের এই যে বিভিন্ন Numerical Value assign করা হচ্ছে, এটার উৎস কী? আমরা কখনওই এটার কোনাে সহীহ উৎস খুঁজে পাবাে না, কারণ উৎসটা pagan mythology, kabbalah.
২। আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় বলছেন যে এটা আরবী কুরআন। আমরা যেন ভুলে না যাই যে অমুক তাবিজ পরলে অমুক উপকার হবে-এটা গায়েবের জ্ঞান। তাই কোনাে নির্দিষ্ট আমল করলে কোনাে উপকার হবে এটা যদি আমরা বলতে চাই, তবে সেটার উৎস অবশ্যই হতে হবে কুরআন এবং সুন্নাহ। তাই তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই তাবিজ ব্যবহার করা শিরক না, এটা নিঃসন্দেহে বিদআত কারণ এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের ইচ্ছাকৃত বর্জন।
৩। এটা সর্বাংশে এড়িয়ে চলা উচিৎ কারণ আমাদের জানা নেই যে এই সংখ্যাগুলাে দিয়ে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম লেখা হচ্ছে নাকি শয়তানকে ডাকা হচ্ছে।
৪। যারা তারপরও এটার উপর অটল থাকতে চান, তাদের জন্য মনে করিয়ে দিতে চাই সূরা বাকারার ১০১ নং আয়াতের কথা। এখানে বলা হচ্ছেযখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন-যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কেতাবদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল-যেন তারা জানেই না। (২:৪১০১) এখানে যে আরবী শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার connotation টা হচ্ছে Trash করা, মানে আবর্জনা যেভাবে হেলায় ছুঁড়ে দেয় মানুষ, সেভাবে। এর ঠিক পরের আয়াতেই যাদুবিদ্যা যে কুফরী সেটা বলা হচ্ছে। মানে হচ্ছে যে মানুষ যখন আল্লাহর কিতাবকে Trash করে, তখনই তারা। সেগুলােকে এভাবে শয়তানি কাজে ব্যবহার করে। আমি বহু মানুষকে দেখেছি যাদের সূরা নাস মুখস্থ, কিন্তু তারা জ্বীনের অস্তিত্বে, যাদু টোনা এগুলােতে বিশ্বাস করে না। যদি কুরআনকে Trash না করা হয়, তাহলে ছাড়া কিভাবে এটা সম্ভব হতে পারে?
আমার সীমিত অভিজ্ঞতা বলে যে যারা এগুলাের উপরে অনেক ভরসা করেন, তারা আসলে শর্টকাট খোঁজেন। তাদেরকে যদি সুন্নাত উপায়ে নিজে কুরআন/ দুআ তিলাওয়াত করতে বলা হয়, তাহলে তাদের খুবই আলসেমী লাগবে এবং তারা নানা অজুহাত খুঁজবেন। ধৈর্য্যের অভাবটাই আমার কাছে এক্ষেত্রে মুখ্য মনে হয়। সুন্নাহ প্রসেস উনাদের কাছে অনেক দীর্ঘমেয়াদী লাগে, উনারা চান কুইক সমাধান।
বই: শিকড়ের সন্ধানে
লেখক: Hamida Mubasshera