ছোটবেলা থেকে চাকরি করার মোটেও আমার ইচ্ছা ছিল না। এজন্যই আমার বন্ধুবান্ধবরা নিরলসভাবে বিসিএস এর প্রিপারেশন নিচ্ছে; সেখানে আমি চলে গেলাম স্রোতের বিপরীতে।
প্রথম প্রথম ওয়েব ডিজাইনের কিছু কাজ শিখলাম; ভালো লাগতেছিল না। কিছুদিন গ্রাফিক ডিজাইন আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোর্স করলাম । কেন জানি সেগুলোতেও আমার মন বসছিল না ।
সাইবার সিকিউরিটির কোর্স করলাম, সেখানেও টিকতে পারলাম না। সব ক্ষেত্রেই এত বেশি প্রতিযোগিতা যে,বলা যায় হতাশ হয়ে গেলাম।
এসমস্ত কাজে বাংলাদেশের রথী-মহারথীগন এতই উচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন যে, তাদের আসনের সামনে মাদুর পেতে বসতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। আমি কেন সফল হলাম না এই কাজগুলা তে?
কারন অন্যরা এ সমস্ত কাজ করে বেশি অর্থ উপার্জন করছে। এটা দেখে সেই কাজ শিখতে চেয়েছি। নিজের দক্ষতার দিকে তাকাই নি।
একদিন খুব সময় নিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন জিনিসের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি? ঠিক কোন কাজটা করলে প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে টিকে থাকতে পারবো? বা কোন কাজটা অন্য কাজের চেয়ে ব্যতিক্রম?
এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যেহেতু রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ড এর একজন ছাত্র। তাহলে রিসার্চ এ আমার ক্যারিয়ার তৈরি করবো। বাংলাদেশের রিসার্চ ফিল্ডে এ কোন ধরনের প্রতিযোগিতা নেই।
একটা ফিল্ডে প্রতিযোগিতা যখন থাকেনা, তখন সেটার ম্যাটারিয়ালস খুব বেশি পাওয়া যায় না। দিক নির্দেশনা ও তেমন পাওয়া যায় না। গবেষণার কাজ গুলো শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি । আমার আগ্রহ দেখে কেউ কেউ হাসতো। কেউ কেউ আবার অবাক হতো কারণ উনারা নিজেরাও গবেষণায় খুব বেশি দক্ষ না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের নামে দুই একটা গবেষণা পেপার থাকে তবে বাংলাদেশে গবেষণা পারে এমন শিক্ষক খুব কম। তাই তারা মনে হয়তো বলতো ছেলেটা গবেষণা শিখতে চায়; ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর।
এরপর ইউটিউব এবং গুগলের সহায়তায় প্রাথমিক জ্ঞান ঝালাই করেছি। কিন্তু গবেষণা ব্যাপারটা যে অন্য কাজগুলোর চাইতে একটু কঠিন! এখানে একজন গুরু থাকাই লাগবে ।
সৌভাগ্যক্রমে বুয়েটের একজন অধ্যাপকের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। এরপর টানা ছয় মাস উনার সাথে থেকে থেকে উনার কাজগুলো করে দিয়ে দিয়ে; গবেষণার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জেনে গেলাম ।
এই ছয় মাস ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমের সময়। কিন্তু গবেষণার প্রতিটি কাজ শেখার মাধ্যমে নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস চলে আসে ।
এরপর আরো আটমাস হয়ে গেলো উনার সাথে কাজ করতেছি। উনি আমাকে প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি সেলারি দিচ্ছেন। এবার ফ্রিল্যান্সিং কাজের কথায় আসি। যে কাজগুলো আমি বুয়েটে করি, ঠিক সেই কাজগুলো অনলাইনে করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং আইডি খুললাম। জাপানি একজন শিক্ষকের সাথে একটা গবেষণা প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলাম। মার্কেটপ্লেসের বাহিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার কাজে পার্টটাইম অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গেলাম ।
লকডাউন এর এই সময়টাতে ১০ জন শিক্ষকের হয়ে দশটি রিসার্চ প্রপোজাল লিখলাম।
অনার্স মাস্টার্স পড়ুয়া এমন অনেকেই যারা থিসিসের কাজ করে তারা আমার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে গবেষণার পরামর্শ নেয়। বিনিময়ে ভালোই সম্মানী দেয়। অনেকে আছে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না, তাদের বেলায় আমি অনেক বিবেচনা করি আলহামদুলিল্লাহ। এত বেশি কাজের চাপের কারণে, নিজের স্টুডেন্টদের কে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেই। বিনিময় তাদেরকেও যোগ্য সম্মানী দিয়ে দেই ।
আমার কাছে বর্তমানে এই পেশাটাকে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন বলে মনে হয়।
লেখক: মোরশেদ আলম