এই পৃথিবীতে সবার পছন্দ এক হয় না, প্রয়োজন কম কথা বলা মানুষ পছন্দ করে, কেউ আবার বেশি। আমাদের সমাজ কম কথা বলা কে ভালো দিক হিসেবে মনে করে থাকে এবং এই ধরনের মানুষ নাকি সভ্য ভালো মানুষের পরিচয় দেয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম কথা বলা কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কথা বলা মানুষগুলি কিন্তু ম্যাক্সিমাম টাইম অধিক সমস্যার মুখে পড়ে যায়। তো আজ আমরা কম কথা বলা মানুষের লাইফের পজিটিভ সাইট এবং নেগেটিভ সাইট নিয়ে আলোচনা করব। এবং আলোচনার একদম শেষে এই প্রবলেমের সলিউশন নিয়েও কথা বলবো।
চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক:
আচার্য চাণক্য বলেছেন; কুকিল পাখি ততক্ষন চুপ থাকে যতক্ষণ না সে ময়ুর সুরে কথা বলে। আর এই কুকিলের ডাক সবাইকে আনন্দ দেয়, অর্থাৎ যখন কথা বলবেন তখন মিষ্টি সুন্দর করেই বলুন।
বাকা বাকা কথা বলার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয়। কুকিল পাখি ততক্ষন চুপ থাকে যতক্ষন না মধুর সুর বার করে।
আর অপরদিকে কাক এমন একটি পাখি যে কখনোই চুপ থাকে না। তার সুর মধুর না হওয়া সত্বেও সব সময় কাকা করে অন্যকে বিরক্ত করতেই থাকে। তাই আমাদেরকে ততক্ষণ শান্ত থাকতে হবে, যতক্ষণ না আমাদের কথা মিষ্টি হয়।
আবার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলতে হবে এবং মিষ্টি কথা বলতে হবে। আর এটা যদি আপনি করতে পারেন তাহলে আপনার আশেপাশের প্রত্যেকে আপনাকে পছন্দ করবে। সবাই আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই, কিন্তু আচার্য চাণক্য এটাও বলেছেন যে “আমাদেরকে খুব বেশি ভালো সহজ সরল হওয়াও উচিত নয়”।
কারণ যদি আপনি বনে গিয়ে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন বনের শুকনা গাছগুলিকে সবার আগে কেটে ফেলা হয় এবং সেগুলোতে অন্যান্য আসবাবপত্র বানানো হয়। কিন্তু বাঁকা গাছগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই যদি আপনিও একজন কম কথা বলা বা অত্যাধিক সহজ সরল বা শান্ত ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে চাণক্য পন্ডিতের এই কথাটি আপনার মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নিন।
কম কথা বলে লোকেদের নিয়ে বেশিরভাগ লোক খিল্লি উড়ায় তাদের সাথে অভদ্র আমি শয়তানি করার সাহস পায়। কারণ তারা জানে যে আপনি খুব সহজ-সরল মানুষ, যার কারণে আপনি তাদের সঙ্গে ঝগড়া কিংবা তার কথার কোন প্রতিবাদ করবেন না। তাই তারা আপনার সঙ্গে বারংবার এরকম ব্যবহার করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু এই সমস্ত দুষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের তাদের ভাষাতেই জবাব দিতে শিখতে হবে।
অর্থাৎ একটা বিষয় রাখবেন কম কথা বলাটা কিন্তু মোটেই আপনার কোনো দুর্বলতা নয়। কিন্তু এসত্বেও তো কোন মানুষ যদি আপনাকে দুর্বলতা ভাবে এবং আপনার অপমান এবং খিল্লি করার সুযোগ পায় তাহলে তখন অবশ্যই আপনাকে নিজের ভালো মানুষের রূপ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ চানক্যের মতে ভালো মানুষের সঙ্গে খুব ভালো এবং খারাপ মানুষের সঙ্গে আরো বেশি খারাপ ব্যবহার করাটাই উচিত।
তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত প্রয়োজন পড়লে আপনিও তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও কম কথা বলা মানুষরা নিজের যা প্রাপ্য সেই দাবী নিয়েও লড়াই করতে পারে না। ফলে নিজের প্রাপ্য জিনিসও হাত থেকে হারিয়ে ফেলে এবং লোকসানে পড়ে যায়।
যেমন ধরুন কেউ আপনার থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছে পরে মিটিয়ে দেওয়ার প্রমিজ করে, কিন্তু আপনি ভাল মানুষ হওয়ায় তাদের থেকে সেই টাকা চাইতেও পারেন না। অথবা একবার দুইবার চাইবার পর নিজের টাকা আবারও চাইতে আপনি ইতস্ত বোধ করেন। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগায় কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ। তারা ভালো করেই জানে যে আপনি সরল, আপনি তার থেকে টাকা চাইতে পারবেন না। আর এই কারনেই আপনি নিজেই নিজের লোকসান করে বসে থাকেন। উল্টা আপনাকেই তারা বিভিন্ন রকম কথা শুনে চলে যায়।
তাই আমাদেরকে এতটাও কম কথা বলা কিংবা সরল হওয়া উচিত নয় যে, সামনের মানুষ যা কিছু করে চলে যায় আর আপনি শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই থাকেন, জবাবে কিছুই বলতে পারেনা।
আর ভেতরে ভেতরে আপনি বুঝতে পারেন যে এটাতো আপনার সঙ্গে অন্যায় হলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন কিছু করার সাহসই আপনি পান না। তাই এই পরিস্থিতিতে আপনাকে তাদের সঠিক জবাব দেওয়া শিখতে হবে। তাদেরকে ভাষাতেই জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে যে আপনি কোন দুর্বল নয়।
কিন্তু যেসব মানুষ সত্যিই ভাল এবং যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের সঙ্গে মোটেই এমনটা করা উচিত নয়। তাদের যদি কিছু ভুল হয় তারা যদি অজান্তেই কিছু ভুল করে ফেলে তখন আপনার কোকিলের মতো শান্ত থেকে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলা উচিত। না হলে তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গেও যেতে পারে। উল্লেখ্য, কথা কম বলেন আর বেশি বলেন তবে এই ৮ টি কথা সব সময় গোপন রাখতে হবে।
সবশেষে এটাই বলবো যে কথা কম বলাটা কোন খারাপ কিছু না। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম কথা বলাটা অবশ্যই খারাপ। সব সময় আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী সবার সঙ্গে ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। অর্থাৎ ভালোর সঙ্গে ভালো এবং খারাপের সঙ্গে খারাপ।
ধন্যবাদ